অনলাইনে আছেন

  • জন ব্লগার

  • ১৫ জন ভিজিটর

তাকরিমের স্বপ্ন

লিখেছেন কাজী তৌফিক এলাহী তারেক শুক্রবার ১৭ মার্চ ২০২৩

পাহাড়পুর! ছোট্ট একটা গ্রাম। সেই গ্রামের একটা কোণে ঝুপরীর মতো ঘরে তাকরিমদের বাসা। একটা স্বাভাবিক মানুষ সেখানে হয়তো কখনো বাস করবেনা। তবে তাকরিমরা সেখানে থাকছে।তাদের সেখানে থাকতেই হয়। কারন এরচেয়ে আর কোনো সুখের ঠিকানা তাদের জানা নাই। তাকরিম এ বছর সবেমাত্র ৫ম শ্রেনী পারিয়েছে। তার বাবা একজন দিনমজুর। খুব কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করান ,তার সফলতায় তিনি তৃপ্তি পান যা প্রত্যেকটা বাবা পান। তার বাবার স্বপ্ন একদিন তাকরিম তার দুখে কাবু হওয়া অশান্তির সংসারে হাল ধরবে ,বাবার সব ইচ্ছা পূরন করবে। তাকরিম ও তার বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে দ্ড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাকরিমের বাবা খুবই ধার্মিক একজন মানুষ। প্রতিদিন তিনি পাশ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আর তাকরিমকে উপদেশ দেন ,নামাজে নিয়ে যান। অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেছে! আগামীকাল প্রথম রামাদ্বান। আশেপাশের সবার রামাদানের বাজার করা শেষ। গত পরশু সাদমান তার বাবার সাথে রোযার বাজার করতে গিয়েছে এবং অনেকগুলা খেলনা কিনে এনেছে। তাকরিম ও বাবার সাথে বায়নাধরেছে যে সেও আজ বাবার সাথে বাজারে যাবে। তার বাবা প্রথমে তাকো সাথে নিতে চাননি। পরে ছেলের জোরাজুরিতে নিতে বাধ্য হলেন। তাকরিমের সে কি একটা আনন্দ। তাকরমির বাবার মুখেও অনেক হাসি , ছেলের হাসিমুখ দেখলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা বাবা মা ই খুশি হোন। তবে তাকরিমের বাবা বেশিক্ষণ সে হাসি ধরে রাখতে পারেন নি। কারন তার তো বাজার করার মতো টাকা হাতে নেই। এ নিয়ে তিনি খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন। ঠিক তখন তাকরিম বলে উঠলো " বাবা চলো বেরিয়ে পড়ি" বাবা তখন বললেন যাব বাবা যাবো। তোমায় নিবো বলছি,মানে নিবোই। তুমি যাও ,গিয়ে রেডি হও" । তাকরিম বড্ড খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো।

তারা বাজারে যাচ্ছে। যত আাগাচ্ছে ততই তাকরিমের আনন্দ বেড়ে চলছে । তবে বাবার মনে কোনো আনন্দ দেখা যাচ্ছে না। বাবা বিষন্নতা নিয়ে পথ চলছে। গতকাল রাহমানের কাছ থেকে জানতে পারছে বাজারে নিত্য প্রয়েজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া ! আল্লাহর হাওলা করে তিনি বাজারে পা ফেললেন তবে সাহস পাচ্ছিলেনা ঢুকতে।

তবে ঢুকতেই তো হবে ,তাকরিম নাছোরবান্দা । বাজারে ঢুকার মুহুর্তে একটা পোল্ট্রি ফার্মের দোকান রয়েছে, সেখানে মুগ দেখতে পেয়ে তাকরিম বলে উঠলো "বাবা ,আজ তোমাকে মোরগ ক্রয় করতেই হবে ,কতদিন হলো মাংসের ঘ্রান পাইনি"। তাকরিমের কথা শোনে বাবার বুকের ভেতরা যেন ফেটে যাচ্ছিলো।

আসলেই তো তিনি তাকরিমের কোনো আবদার ই পূরন করতে পারেননি আজ পর্যন্ত । সবসময় একটা না আরেকটা বাহানা দেখিয়ে ছোট্ট তাকরিমকে ধোঁকা দিয়ে গেছেন। বাবাকে অন্যমনস্ক দেখে তাকরিম তার বাবাকে ডাক দিলো। তার বাবার চৈতন্য ফিরলো তিনি বললেন তাকরিম চলো বাজারের ভেতর দিকে যাই। বললো বাবা আমরা কি আজ মাংস দিয়ে সেহরী করব না?

বাবা রাগ করে বলে উঠলেন নাহ! গরিবদের মুরগ দিয়ে সেহরী করা পাপ!!!!

তাকরিম তো পুরাপুরি অবাক। এ কি আসলেই পাপ। হয়তো ।তাকরিম এতোসব ্বুঝেনা।

বাজারের ভেতরে বিয়েও লাভ হলো না। সবকিছুর ই তো দাম বেড়ে গেছো। অথচ তাকরিমের বাবার বেতন কিন্তু ১০ বছর আগে যা ছিলো এখনও তাই। মাঝেমাঝে তার বাবা বড্ড অবাক হয়।

তারপর স্বল্প বাজার নিয়ে তাকরিমের বাবা বাড়িতে চলে যান। তাকরিমকে তার আবদারের জিনিসগুলা ক্রয় করে দিতে পারেন নি। 

তিনি ভাবতে লাগলেন " আমার চেয়ে ব্যর্থ বাবা কি আর হতে পারে!!

তাকরিম মন খারাপ করে বাবার সাথে বা্রিতে চলে আসে।

সে স্বপ্ন দেখতে থাকে একদিন তাদের অনেক টাকা হবে সেদিন সে বাবাকে সাথে নিয়ে বাজারে গিয়ে অনেকগুলো মাংস কিননে, তার সখের পুতুল , বল,সবকিছু কিনবে। নিজেকে খুবই অসহায় ভাবতে লাগলো আর বলতো লাগলো আমার স্বপ্ন পূরন হবেই,বাবার মুখে হাসি ফুটবেই।

সেই আশায় থাকলো তাকরিম ,আমরা ও আশায় থাকলাম বাংলাদেশ থেকে অমানুষগুলা পালাবে, নিত্যপন্যের দাম হাতের নাগালে থাকবে ,তাকরিমের বাবার সম্ভব হবে ছেলের আবদার কিছুটা হলেও পূরন করতে। 

এদেশের পুব আকাশে সূর্য উদিত হবে ,সাম্যের সূর্য ।


০ টি মন্তব্য      ২৭ বার পঠিত         

লেখাটি শেয়ার করতে চাইলে: